*"পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম: পিত্য হি পরমং তপ"*
*সুজনেষু,*
জীবন বীনার তারে আচমকা ঝংকৃত হলো বিষাদ পর্বের সুর। মাধ্যাকর্ষণ ছিঁড়ে বাবা চলে গেলেন অনন্ত লোকের ঠিকানায়।সেই বিষণ্ণ অধ্যায়ের মধ্যেই পরম্পরা মেনে ছোট্ট আবহে পারলৌকিক কাজ ও মৎস্যমুখীর আয়োজন।এই শূন্যতার মুহূর্তে আপনাকে পাশে পেলে আমাদের ভালো লাগবে।আসবেন।ভালো থাকবেন।
*শোকস্তব্ধ*
অভিজিৎ ভাওয়াল(পুত্র)
এবং
লক্ষী রানী ভাওয়াল(স্ত্রী)
সুস্মিতা ভাওয়াল(পুত্র বধূ)
আয়ুষ্মিত ভাওয়াল(পৌত্র)
সৃজিতা ভাওয়াল(পৌত্রী)
সোমা দত্ত(কন্যা)
পিঙ্কি দাস(কন্যা)
পরিতোষ দাস(ছোট জামাতা)
অরিজিৎ দত্ত(দৌহিত্র)
পারমিতা দাস(দৌহিত্রী)
প্রদীপ্তা দাস(দৌহিত্রী)
মৃত্যু দিন:25 জুলাই'2022
পারলৌকিক ক্রিয়া:6 আগষ্ট,2022
*মৎস্যমুখী:8 আগষ্ট,2022*
স্থান:সূর্য সেন মঞ্চ,ইসলামপুর,উত্তর দিনাজপুর
সময়:দুপুর একটা
টাকা
সুশান্ত নন্দী
____________
যে টাকাটা আঁকড়ে ধরি
বুক পকেটে ঢুকিয়ে রাখি,
জানো আমরা ওই কাগজে
হাজার মানুষ নোংরা মাখি।
সাফাই কর্মী নেয় বকশিশ
ময়লা হাতে সবাই জানে,
মাছ মাংসের দোকান থেকে
রক্ত লাগেও সেই খানে।
ওই টাকাটাই দিচ্ছি আমরা
মন্দিরেতে বা মাজারে,
মানি ব্যাগে রাখছি ভরে
খরচ করছি বাজারে।
নিজের জ্ঞানেই আমরা সবাই
অর্থটাকে নষ্ট করি,
আমরা আবার পাড়ায় পাড়ায়
স্বচ্ছ ভারত দল গড়ি।
টাকার বেলায় আমরা সবাই
উদাস কেন বলতে পারি?
তাই তো ওই ব্যাকটেরিয়ার
টাকার উপর দখলদারি।
যে টাকাতে রোগ তাড়াতে
কিনছি ওষুধ আমরা সবাই,
রোগ জীবাণু বহন করে
আনছে আবার সে টাকাই।
টাকার মধ্যে রাখছি লিখে
লেন-দেনের হিসেব খানা,
শুনছি কোথায় নিয়ম কানুন?
মানছি কেউ নিষেধ মানা?
আমরা নাকি এই দেশেরই
শিক্ষিত সব জনগণ,
নোংরা টাকা দিচ্ছি নিচ্ছি
আমরা নাকি সচেতন!
টাকার ভিতর মারণ রোগ
ঘুরছে আমার তোমার বাড়ি,
আমরাও তো এই সম্পদ
স্বচ্ছতাতে রাখতে পারি।
(ছন্দে ছড়ায় টাকা ব্যবহারের বিষয়ে একটি সচেতনতার বার্তা)
*এবং রোদ্দুর থেকে...*
কবিদের হাতের লেখায় সমৃদ্ধ হোক এই পত্রিকা।তাই নিজের হাতের লেখায় তিন পংক্তির অণু কবিতা পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে।
সম্পাদক
*সুশান্ত নন্দী*
নিয়মাবলী:
১)একটি সাদা এ ফোর সাইজের কাগজকে চার ভাগ করে একভাগের মধ্যে লিখতে হবে।
২)লেখার সময় কাগজের এক চতুর্থাংশ চওড়া করে নেবেন।
৩)কালো সরু মার্কার দিয়ে লিখবেন।শিরোনাম ও কবির নাম সহ।
৪)লেখার পর সেটি স্ক্যান করে পাঠাবেন।
৫)আগামী ৫ অক্টোবরের মধ্যে লেখা পাঠাবেন।
৬)পংতি গুলো যেন বাঁকা না হয় সেদিকে নজর রাখবেন।
শুনবেতো...
সুশান্ত নন্দী
_________________
প্রতিটি রাত ভেঙে যায়
হুঁইশালের আওয়াজে
ফের শুরু স্বপ্নের জাল বোনা
নিয়ন বাতির নিচে
জেগে থাকে কত উপবাসী সংসার
এভাবেই জীবন জুড়ে পেরিয়ে যায়
উৎসবহীন বসন্তের নির্ঘুম সময় সারণি
কখনো শরীরে ছিটকে এসে পড়ে
স্ক্র্যাচ বোতল কিংবা জ্বলন্ত সিগারেটের ভগ্নাংশ
ওদের অন্ধকারে ভেজে বৃষ্টিতে
ছেঁড়া মাদুরে এসে কখনও জমা হয়
কিছু আদ্র বাতাসে
টুকরো টুকরো রোদ্দুর
আমাকে তো চিরকাল সমুদ্রের গল্প শুনিয়েছো
আমি শোনাবো অজস্র ভিক্ষাবৃত্তির শৈশব
আর বেদুইন জীবন সিরিজ
শোনাবো ছেঁড়া মাদুর কাঁথায় বিছানো
ভোররাতের আজানে কিভাবে জেগে ওঠে
১৩ নম্বর প্লাটফর্ম
শুনবেতো ঢেউহীন মৃত নদীর কথা
বাতিহীন সভ্যতার কথা
আমার জমানো সব অন্ধকার
আজ উৎসর্গ করছি তোমাকে
হ্যাঁ তোমাকেই
শুনবেতো
(বিষাদ-মাদল)
সুশান্ত নন্দী-র অনুসিরিজ কবিতা
■ জন্ম
সব আদর ভ্রূণের শরীরে লেখে না জন্মকথা
■ বর্ণমালা
তুমি আলোটুকু জ্বেলে দিলে বর্ণমালায় রঙিন হবে আমার ঈশ্বর
■ প্রেমপূজারি
ভালোবাসা ভিক্ষে করি প্রতিটি মুহূর্তে
অথচ আমি শুধু তোমারই পূজারি
■ পথ
প্রতিটি পথেইতো চোরাস্রোত
আমি গন্তব্যে পৌঁছাই কি করে
■ ফুল
ঝরে গেলেও একবার ফুলজন্ম দিও
প্রকৃতির সাজঘরে তুমিই প্রিয়ংবদা
■ সময়
সময়ের স্রোত থেমে গেলে
বসন্ত অন্তঃসত্ত্বা হবে কিভাবে
■ স্বাগত
আর পুরাতনী শুনিও না
নতুনের আঁচল বিছিয়ে দাও প্রিয়
■ দৃষ্টি
মাটির দিকে তাকিয়ে থাকলে
আকাশ দেখবে কিভাবে
■ ঈশ্বর
জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে এসে
যে ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে পড়ে
তিনিই আমার ঈশ্বর
■ দিশা
উপরে চাঁদ নিচে নিয়নবাতি
কোন্ আলোতে যাপন রাখি
■ বিপ্লব
মাঝপথে প্রতিবাদ থেমে গেলে
পতাকাও নেমে যায়
স্রোতহীন হয়ে পড়ে বিপ্লব মিছিল
■ স্বাদ
জলরঙে মিশে যায় নোনতা স্বাদ
বিষাদ হয়ে ওঠে মায়া ক্যানভাস
■ আপেক্ষিক
রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে
দেখা হয়ে যায় পরাজয়ের সাথেও
■ ক্ষত
রঙিন প্রজাপতির শরীরেও
লুকিয়ে থাকে অজস্র ক্ষতচিহ্ন
■ স্রোত
অবজ্ঞার স্রোত দীর্ঘস্থায়ী হলে
সব আলো নিভে যাওয়া সম্ভাবনাময়
■ শান্তি
জোছনার আলো ঘরে ঢুকে গেলে
পালিয়ে যায় মৌন-অসুখ
■ আওয়াজ
টুপটাপ আওয়াজের ভিতর মগ্ন হলে
আমরা সবাই খুঁজে পাই পৃথক অর্থ
■ সংসার
উনুনে হাঁড়ি না বসলে প্রেম মূল্যহীন
■ নতজানু
বৃক্ষের সামনে নতজানু হলে
ভুলে যাই হিংসার সাতকাহন
■ মানবিক
তুমি মানবিক হলে ঈশ্বর এসে বাসা বেঁধে যাবেন হৃদয়পুরে
■ সাজ
বিষাদ সেজে উঠলেই জোছনাও ম্লান হয়ে যায়
■ সেতু
দুজনের দূরত্বের মাঝে
অঙ্কুরিত হোক পলাশবীজ
■ স্পর্শ
অসুখ হলে তোমার উষ্ণতাকে খুঁজি
■ টান
শূন্যতা আমাকে নিয়ে যায় কবিতার কাছে
■ উপলব্ধি
সৃজনের নিকট নিবিড় হই বলে আমিও নদ হতে পারি
■ কবিতা
বৃষ্টির শব্দে কবিতারা বাসা বাঁধে বুকে,
শব্দে শব্দে আঁকি তোমার অবয়ব
■ মমি
এত অন্ধকার শুধু মমিদের ভালো লাগে
■ প্রেম
সবুজ হবে বলে --
ফাগুন তোমাকে কিভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে দেখো
■ সঙ্গম
সঙ্গম না এলে নদীও থেমে যাবে মৃত নগরীর পাশে
■ পরব
অজস্র শোক পেরিয়ে তুমি আর উৎসব হতে পারোনি
■ গমন
গভীর অসুখের ভেতর দিয়ে উৎসব হেঁটে যেতে পারে না
■ বিষাদ-মাদল
উনুন জ্বলেনি বলে মাদল বাজেনি গ্রামে গ্রামে
■ শোক
এভাবে শোক এলে জোছনাও মুখ নামিয়ে নেয়
■ বিশ্বাস
বিশ্বাস নির্মিত না হলেই পাখির মতো দূরত্ব
■ চিহ্ন
তুমি যতিচিহ্ন বসিয়ে দিলেই মৃত্যু মূর্ত হবে
■ পূর্ণতা
শূন্যস্থানে তুমি লিখে দিও আদর অনুভূতি
■ মৈথুন
ঘুমের সাথে মৈথুন মিশে গেলে সব প্রেম নদী হয়ে যায়
■ ব্যাকরণ
চোখে চোখে যে কথা বিনিময় হয়, তা ব্যাকরণ মানে না
■ জলতরঙ্গ
যৌনযন্ত্রে হাত ছোঁয়ালেই বেজে ওঠে জলতরঙ্গ
■ সম্পর্ক
সম্পর্কে পূর্ণচ্ছেদ দিও না, ভালোবাসা থেমে যাবে
■ নদী
গ্রীষ্মে মৃত্যু আর বর্ষায় পুনর্জন্ম ধারা
■ অপেক্ষা
পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়লে সকাল প্রতীক্ষিত
■ গুণিতক
স্তব্ধতার ভিতরে হেঁটে যায় শবের গুণিতক
■ মা
ভূগোল আলাদা হলে এত স্নেহ কোথায় বিলোবে জন্মদাত্রী
■ প্রবাহ
বাতাসে প্রেম এলে সুগন্ধি ছড়াবে গুঞ্জরণে
■ দোষ
শরীরে প্রেম জারিত হলে তুমি দোষ দেবে
কাকে
■ কার্ফিউ
এভাবে কার্ফিউ এলে সব লড়াই থেমে যাবে একদিন
■ ভ্রমর
এবছর আর বসন্ত এলো না জোছনার মত করে
■ পোশাক
জোছনাপোশাক খুলে পলাশের পাশে উজাগর থাকে ফাল্গুন হাওয়া
■ পথ
দুর্যোগ পেরিয়ে এলে সবুজ পতাকা তুলে দেব হাতে
■ দাবানল
ওভাবে দাবানল ছড়ালে ঈশ্বর এসে দাঁড়িয়ে যাবে জলাশয়ের পাশে
■ বিসর্জন
সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিসর্জনের রাস্তায় হেঁটে যাবে শূন্যতা
■ ছায়া-রোদ্দুর
রোদ্দুরের পাশ দিয়ে কিভাবে ছায়া হেঁটে যায় দেখো
■ ফ্লোরেন্স
ফ্লোরেন্স ,অজস্র জীবন কিভাবে শুধু নিস্তব্ধতার দিকে হেঁটে যাচ্ছে দেখো
■ নিরাময়
জোছনার মত কাছে এলে বুকের সব ক্ষত সেরে যাবে
■ আঁচল
আমি অন্ধকার পেরবো বলে তুমি আঁচলে রোদ্দুর রেখে যাও
■ নীরবতা
জোছনার কাছে নীরবতা শিখি শুধু
■ জীবন
খড়কুটোর মতো ভেসে গেলে উষ্ণতা বহন করছো কেন
■ প্রহরী
দরজায় মৃত্যু জেনেও তুমি প্রহরী হয়ে থেকেছো
■ ছায়াপথ
ওভাবে আঁধার বিছোলে ছায়াপথ উর্বর হবে কিভাবে
■ আগন্তুক
কামনার আগে বিষাদ এলে সম্পর্ক কখনও প্রস্ফুটিত হয়না
■ আঁধার
যেখানে অন্ধকার নেই সেখানে বিষাদ অর্থহীন
■ স্নিগ্ধতা
আগুন নয় আমি চেয়েছি অন্য আলো
■ নগ্নতা
ঝরা পাতার মতো নগ্ন হলেই আমি বসন্ত
■ ঈশ্বর
শরীরে প্রেম এসে গেলে তুমি কিভাবে ঈশ্বর হয়ে যাও
■ ফেরা
এতো অন্ধকার বহন করলে রাস্তায় আলো এসে ফিরে যাবে
■ সংশয়
সূর্যের মতো দুচোখ ঝলসে দিলে কিভাবে তাকাবো বলো
■ প্রভা
সম্পূর্ণ নিঃস্ব হলে ঈশ্বর আলো ছড়াবে তোমার বুকে
■ হিংস্রতা
ভালোবাসার পাশে দাঁড়িয়ে কখনও হিংস্রতাকে দেখি
ঝলসে যায় কথার পরাগ
■ অন্ধকার
অন্ধকার দীর্ঘস্থায়ী হলে সভ্যতার সবুজ পুড়ে যায়
■ ভ্রূণ
দুটো শরীরে একসাথে জোছনা এলে বাতাস ভ্রূণের স্বপ্ন দেখে
■ আঁচল
ঘন সবুজ আঁচল বিছিয়ে দিলে আমি নির্বাসন ভুলে যাই
■ স্রোত
অনন্ত সৌন্দর্য বহন করেছো বলেই আমি নদী হয়েছি
■ সঙ্গম
নদীর ধারায় উড়ন্ত সঙ্গম শুধু মাছরাঙাই জানে
■ দেশ
শস্য দানার মাঝে লুকিয়ে থাকে ভারতবর্ষ
আমরা নিশানা উড়াই মানবিক স্রোতে
Hide quoted text
ঘুরে এলাম দুঃখু মিঞার গ্রাম চুরুলিয়া
সুশান্ত নন্দী
_____________
ও দাদা, এটাই কি চুরুলিয়া গ্রাম?
হ্যাঁ।
নজরুল একাডেমিটা কোথায়?
ওই রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে যান।
আসানসোল থেকে বাসে দীর্ঘ পঞ্চাশ কিমি রাস্তা পেরিয়ে চুরুলিয়ায় নেমেই যার কাছে জানতে চাওয়া হলো এসব তথ্য; কথাবার্তার আদান প্রদান শেষ হতেই তার মোবাইলে বেজে উঠলো নজরুলের গানের রিংটোন।এরপর হাঁটা পথেই আরও একাধিক এমনই রিংটোন কিংবা কোনও বাড়ি থেকে ভেসে আসা নজরুল গীতি শুনতে শুনতে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়াটাও যেন ভ্রমণের একটি অনন্য পর্ব হয়ে উঠেছিল।
সরাসরি নজরুল একাডেমিতে পৌঁছে মুখোমুখি হলাম কাজী নজরুলের ভাতুষ্পুত্র কাজী রেজাউল করিমের সাথে।ওই গ্রামে কিংবা কলকাতায় যার সাথে নজরুল ও তার স্ত্রী প্রমীলা দেবীর অনেকটাই সময় কেটেছিল।শুরু থেকেই অজানা তথ্যের অনেক গভীরে যেন তলিয়ে যাচ্ছিলাম।দুঃখু মিঞার চুরুলিয়া সম্পর্কে জানার ইচ্ছেটা যেন ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছিল।
অনেক দূর থেকে এসেছেন।একটু বিশ্রাম নিন।তারপর বিকেলে আড্ডা হবে।এই বলে আমাদের সাময়িক আশ্রয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন রেজাউল করিম।
একটি গ্রাম নজরুলের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে কিভাবে সেজে উঠতে পারে।অথবা প্রতিটি গ্রামবাসীর হৃদয়ে নজরুল যে কিভাবে জায়গা করে নিয়েছে তা না দেখলে বোঝানো মুশকিল।গোটা গ্রাম ঘুরে আমি ও আমার লেখক বন্ধু শুভদীপ রায় বার বার উচ্চারণ করলাম"মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান"।কয়েক দশক ধরে যেন আত্মীয়র মতো মিলেমিশে রয়েছে ওই গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ।যেন এক অনন্য সম্প্রীতি।গ্রামে নজরুল একাডেমী তৈরি করে কবির স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি উত্তরসূরীরা।নজরুলের বসত ভিটাই এখন নজরুল একাডেমিতে রূপান্তরিত হয়েছে।আহা তাদের আন্তরিক আতিথেয়তা মনে রাখার মতো।ওই গ্রামেই গড়ে উঠেছে ঝা চকচকে যুব আবাস।ডরমেটোরি এবং ডাবল বেড রুম সহ সুন্দর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে।তবে আগে থেকে অনলাইনে বুকিং করে যেতে হয়।নজরুলের স্মৃতিকে অনুভব করতে হলে অন্তত একটি দিন কিন্তু বেশ সুন্দর কাটিয়ে আসা যায় ওই গ্রামে।খাবারের ব্যবস্থা বলতে স্থানীয় বাজারে রয়েছে একমাত্র হোটেল।দুপুরের আহার সেরে বেরিয়ে পড়লাম কবির স্মৃতি বিজরিত গ্রাম পরিদর্শনে।একটি টোটো ভাড়া করে বিন্দাস ঘুরে বেড়ালাম চুরুলিয়া। নজরুল যে মক্তবে পড়াশুনা করেছিলেন সেখানে পৌঁছে দেখলাম সে মক্তব এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে।তবে সেখানকার প্রবেশদ্বারে বিদ্রোহী কবির স্মৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। পায়ে পায়ে কবি যে পীর পুকুরে স্নান করতেন কিংবা কখনও ঝাঁপিয়ে পড়তেন সেই পুকুর যেন এখনো সেই রকমই রয়ে গিয়েছে।গ্রাম ঘুরছি আর কখনও গুন গুন করে নজরুলের গান গাইছি কিংবা কবিতার পংক্তি আওড়াচ্ছি।বেশ লাগছিল কিন্তু।এরপর যে মসজিদে দুঃখু মিঞা নামাজ পড়তেন সেখানে পৌঁছে যেন হারিয়ে গেলাম অথৈ স্মৃতির অতলে।ঘুরছি আর নজরুলের উত্তরসূরী কিংবা বর্ষীয়ান গ্রাম বাসীদের কাছ থেকে শুনছি নানান তথ্য।চলে এলাম সেখানকার গ্রন্থাগারে।একটা গ্রামে এত বড় লাইব্রেরী থাকতে পারে সেখানে না গেলে হয়তো তা অনুভব করা যেত না।সেখানে নজরুলের ব্যবহৃত প্রচুর বই রয়েছে।গ্রামের মানুষ নিয়মিত আসেন লাইব্রেরীতে।দারুন পরিবেশ।পৌঁছে গেলাম নজরুল ও প্রমীলার ব্যবহৃত নানান জিনিসে ভরপুর মিউজিয়ামে।কি নেই সেখানে!তাদের ব্যবহৃত পোশাক,পুরুস্কার থেকে শুরু করে নানান জিনিসের ভিড়ে যেন হারিয়ে যাওয়া।রাতে যুব আবাসে ফিরে নজরুলের উত্তরসূরী সুবর্ণ কাজীর সাথে বিন্দাস আড্ডায় উঠে এলো অনেক অজানা তথ্য।তার কথায়, রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের মতো সেজে উঠতে পারে এই গ্রাম।তাতে নজরুলের ভাবনার আরও প্রসার ঘটবে।সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারি ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হলে বদলে যাবে এই গ্রাম।আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে পর্যটকদের ভিড়ে।যদিও ইতিমধ্যেই কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল একাডেমি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র অধিগ্রহণ এর কাজ শুরু করেছে।
একটা কথা হয়তো বলা হয়নি।চুরুলিয়া ঢোকার সময় বাস থেকে নেমে নজরে পড়েছিল অদূরে টিলা পাহাড়! কিন্তু চুরুলিয়ার পাহাড়ের কথা তো শুনিনি কখনও।গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল সেসব জায়গায় আগে কোলিয়ারি ছিল।খাদানের মাটির স্তুপ এখন দূর থেকে টিলা পাহাড়ের মতোই লাগে।তবে ভ্রমণের শেষ পর্বে অজয় নদ ছুঁয়ে সেই জায়গাটা ঘুরে আসা যেতে পারে। ভালো লাগবেই।কথা দিচ্ছি।
বাবা
সুশান্ত নন্দী
_____________
ওই টুকু আলো নিয়েই বেঁচে আছি
যত টুকু আছে এখনও
দুহাতে ছড়িয়ে দিচ্ছি শুধু
বাকি আলো থেকে আরও আলো জ্বালিয়ে দেবে ওরা....